সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মহিববুর রহমান মুহিবের বিরুদ্ধে।এমপি হওয়ার ১ মাসের মাথায় শনিবার শুরু হয়েছে দখল প্রক্রিয়া। ভেঙে ফেলা হয়েছে পাউবোর কাছ থেকে লিজ নেয়া জমিতে গড়ে ওঠা একাধিক দোকান ঘর। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
তবে এমপির লোকজন দখল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এমপি মুহিব অবশ্য অভিযোগ স্বীকার করেননি, বলেছেন আলোচ্য দাগে তার রেকর্ডীয় জমি রয়েছে।
কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি হওয়ার ৭ দিনের মাথায় মহিববুর রহমান পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে লোকজন পাঠিয়ে মাপজোক এবং সীমানা পিলার বসান। ২১ জানুয়ারি পাউবোর পটুয়াখালী জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এমপি মুহিববুর রহমান সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ৭ জানুয়ারি পাউবোর ৫৭নং জেএলভুক্ত কুয়াকাটা মৌজার ১২৫৮নং খতিয়ানের জমিতে মাপজোক এবং ১১ জানুয়ারি পিলার বসান। পরে ১৬ জানুয়ারি পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত ২০ জানুয়ারি ওই আবেদনের শুনানি করেন।
বিচারক ২০ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করেন।’ এরপরও ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় পাউবোর জমি দখলের প্রক্রিয়া। ওইদিন এমপি মুহিবের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত শাকিল আহম্মেদের নেতৃত্বে অর্ধশত লোক দখলে অংশ নেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দখলে নেয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই মূল্যবান জমি।
দোকান হারানো রাজধানী হোটেলের মালিক শাহজাহান মিয়া এবং রুচিতা হোটেল মালিক আবু বকর জানান, ‘কোনো রকম নোটিশ কিংবা আগাম ঘোষণা ছাড়াই দোকান ভেঙে দেয়া হল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে বৈধ প্রক্রিয়ায় লিজ নিয়ে ৩৫ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছিলাম। পৌরকর এবং সরকারি রাজস্বও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এমপি সাহেবের লোকজন হঠাৎ আমাদের দোকানপাট ভেঙে দিয়ে সব দখল করে নেয়। এমপি সাহেবের প্রজেক্ট ম্যানেজার শাকিল আহম্মেদের নেতৃত্বে ৬০-৭০ জনের দল ভাংচুর চালায়।
কথা হয় কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীদের সঙ্গে। তারা জানান, ‘এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে এবং রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। এমপি মুহিবের লোকজন কোনো কিছুই শুনলেন না।’ জানতে চাইলে এমপি মুহিবের প্রজেক্ট ম্যানেজার শাকিল আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘২৭ বছর আগে এমপি স্যার এ জমি কিনেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বাধার ফলে দখলে যেতে পারেননি। এখন এমপি হওয়ার পর স্যার (মুহিব) জমির দখল নিয়েছেন।’ কুয়াকাটার পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, ‘জমি দখল কিংবা বেদখল বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে এমপি সাহেব জানিয়েছেন যে ওই জমি তার ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় সম্পত্তি। তার নামে নাকি বিএসও আছে। এখন তার সম্পত্তি তিনি বুঝে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে এমপি সাহেবের সঙ্গে কথা বললেই ভালো হয়।’
জানতে চাইলে পাউবোর কলাপাড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, ‘এমপি সাহেবের সঙ্গে পাউবোর ৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ এবং মামলা চলছে। অথচ বর্তমানে যে দখল প্রক্রিয়া চলছে তাতে পুরো ৪৭ শতাংশ জমিই বেহাত হওয়ার পথে। এ জমির বাজার দর প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এ জমি লিজ নেয়ার বিনিময়ে সরকারকে ৫০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। আমি বর্তমানে দাফতরিক কাজে ঢাকায় রয়েছি।
কলাপাড়া অফিস এবং যাদেরকে ওই জমি অস্থায়ী ভিত্তিতে লিজ দেয়া হয়েছিল তাদের মাধ্যমে দখল প্রক্রিয়া চলার খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আদালতে চলমান মামলার রায়ের অপেক্ষা না করে এভাবে জমি দখলের বিষয়টি দুঃখজনক। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ পাউবোর জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে এমপি মুহিব বলেন, ‘ওটা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। জমি নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো প্রকার বিরোধ নেই। মালিকানার সপক্ষে আমার কাছে সব রকম প্রমাণাদি রয়েছে।
পাউবোর মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জমি নিয়ে কোনো মামলা নেই। আগে একবার সেখানে মারামারি হয়েছিল। সেই ঘটনায় একটি মামলা আছে। এছাড়া আর কোনো মামলার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি আমার রেকর্ডীয় সম্পত্তি দখলে নিয়েছি। এখানে অবৈধ বা বেআইনি কিছুই করা হয়নি।
Leave a Reply